Saturday, April 21, 2018

ডেড লেটার (Dead Letter)

একটা সকাল...
একটা মেঘাচ্ছন্ন সকাল আর ঝিড়ি ঝিড়ি বৃষ্টি।আমার কাছে বৃষ্টি একদম বিরক্তিকর তখন।সেই বিরক্তিকর বৃষ্টিতেই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম আর হঠাত করেই চোখ পরলো ফুটপাতে ছাতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তোমার দিকে।একবার ডানে তো একবার বামে রিক্সার খোঁজে তোমার তাকিয়ে থাকা আর চুল নিয়ে খেলতে থাকা।এসব দেখে আমি মুহূর্তের জন্য এক ধরনের স্বপ্ন নিয়ে খেলতে শুরু করলাম,যে স্বপ্ন আগে কখনো দেখিনি।



Image result for An girl waiting on the street in rain with an umbrella

তোমার দিকে তাকিয়ে সেই স্বপ্ন দেখতে দেখতেই আমার সাইকেলটার সঙ্গে রিক্সার সংঘর্ষ,আর আমি লুটিয়ে পরলাম বৃষ্টির পানিতে ডুব দিয়ে থাকা পিচঢালা রাস্তাটাতে।তবে তাতে কিন্তু আমার একটুও লস হয়নি,বরং অনেক লাভই হয়েছিলো।রাস্তার কাঁদা পানিতে পরে যাবার পর কি হাসিটাই না দিয়েছিলে তুমি।সেখান থেকেই যেন প্রেম নামের আসক্তি আমাকে আঁকড়ে ধরলো।

Image result for a boy with a cycle in rain

তারপর রোজ তোমার জন্য কবিতা লেখা শুরু।তুমি যখন বাসস্টান্ডে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে বাসের অপেক্ষায়,আমি তখন চায়ের দোকানের ছেলেটাকে দিয়ে রোজ কবিতা পাঠাতাম তোমার কাছে।তুমি যখন কবিতা পড়তে আর মৃদু হাসতে তখন আমিও তোমাকে লুকিয়ে দেখতাম আর তোমার হাসির অপার সৌন্দর্যে পরে স্বপ্নে হারিয়ে যেতাম।Image result for An indian girl waiting at the bus stand

আমি জানতাম তুমি আমাকে প্রায়ই খুজতে কিন্তু, আমি জানিনা কেন যেন আমিও তোমার সামনে আসতে পারতাম না।হয়ত আমাকে না দেখেই তোমার হৃদয়ে যে ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছিলো সেটার মায়ায় বেশি পরে গিয়েছিলাম।

একদিন তুমি ঠিকই আমাকে খুঁজে বেড় করে নিলে সেই চায়ের দোকানের ছেলেটার সাহায্যেই।আমার কাছে আসার পর দুজন নীরব হয়ে দুজনের দিকে কিভাবে তাকিয়েছিলাম,যেন দুজনেই কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না এবং শুধু নির্জন তাকিয়ে দুজনের হৃদয়কে অনুভব করার চেষ্টা।হঠাত করেই তুমি দু'পা সামনে এগিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে।আর সেদিনের সেই স্পর্শের গন্ধ আজও আমার বুকে লেগে আছে।Image result for Boy and girl hugging

এরপর থেকে তোমার কতো পাগলামিই না সহ্য করতে হয়েছে আমাকে।কখনো বাসের টিকিট ছাড়া বাসে উঠতে বাধ্য করেছো,কখনো রাস্তার মধ্যেই হঠাত করে গান গাওয়ানোর বায়না ধরেছো।আবার গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে তোমার বায়না মেটাতে কবিতা লিখেও শোনাতে হয়েছে।
আর আজ ! তোমার সব পাগলামি থেকে আমি মুক্ত।

একটা সময় এলো যখন বাসায় তোমার বিয়ে দেবার জন্য তড়িঘড়ি শুরু হয়ে গেলো।তুমি আমাকে বার বার বলতে --"চলো না আমরা বিয়ে করি।"
মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে হিসেবে খুবই স্বাভাবিক জীবনে এস্টাবলিশ হবার আগে সেরকম কিছু ভাবা অনেকটা পাপ।এজন্যই তোমাকে বলেছিলাম-"ভালো প্রস্তাব পেলে বিয়ে করে নাও।"
জবাবে তুমি বলেছিলে--"No one can replace you"

Image result for Bride groom and bride in indiaতারপর অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই পেয়ে গেলাম একটা ভালো চাকুরি।সাথে সাথে দুজনের পরিবারের সম্মতি এলো এবং পরিনতি বিয়ে।আমরা তখন আরো কাছাকাছি...অনেক কাছাকাছি।প্রতিদিন অফিসে যাবার সময় দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া আর রাতে বাসায় আসার পর রবীন্দ্র সঙ্গীতে দু'জন হাত ধরে প্রেমনৃত্য কি কখনো ভোলা যায়!
এখনো রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনি কিন্তু, তোমার সাথে নয় ,অন্য কারো সাথে।তোমার ৫ বছরের মেয়ে...উহু , তোমার-আমার ৫ বছরের মেয়ে বর্ষার সাথে।

Image result for Father and daughter

একদম মেয়েটা তোমার মতো হয়েছে।সেই চোখ,সেই  মুখ,সেই চুল আর সেই শরীরি গন্ধ।আমার প্রতি ভালবাসাও তোমার মতোই অনেক বেশি।তোমাকেও খুব ভালবাসে মেয়েটা। সুযোগ পেলেই তোমার ছবির সাথে কথা বলে। অবশ্য ও একা নয়,আমিও বলি।

নতুন আরেকটি বর্ষাস্নাত দিনে বর্ষার জন্মের পরপর যখন তুমি মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছিলে এবং আমার আঙ্গুল ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর আঙ্গুল ধরে চলে গেলে,তখন বাইরের বর্ষার মতোই কেঁদেছিলো মৃত মায়ের পাশে শুয়ে থাকা আমার মেয়ে বর্ষা আর ওর হতভাগা বাবা।

Image result for Father sitting to new born baby in the hospital

তারপর থেকে বিধাতার নিয়মের প্রতি প্রচন্ড রাগ হতো আমার।এখনো হয় মাঝে মাঝে।চলে যাবার আগে তুমি বলে ছিলে আরেকটা বেয়ে করে নিতে।তখনকার পরিস্থিতি আমাকে নির্বাক করে রেখেছিলো তাই সেদিন কিছু বলতে পারিনি।তবে আজ বলছি, "No one can replace you".

তোমার জন্য এখনো কবিতা লেখি। হ্যা,আগের মতোই প্রতিদিন লেখি।তারপর সেটাকে চিঠির খামে করে ডাক বাক্সে জমা দেই। কিন্তু,তোমার ঠিকানাটা'না আমার সঠিক জানা নেই।তাই প্রাপকের ঠিকানাবিহীন সবগুলো চিঠিই যে ডেড লেটার (Dead Letter) হিসেবে বিবেচিত হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।

আজ আমাদের ৬ষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকী।তাই এই চিঠিটা তোমার জন্যই লিখেছি।আরেকটু পরেই এটাকে খামে ঢুকিয়ে ডাক বক্সে জমা দিয়ে আসবো।পৃথিবীতে যোগ হবে আরেকটি ডেড লেটার।


আচ্ছা শ্রাবন,ভালবাসার কী কোনো সীমানা আছে ? দূরত্ব কি ভালবাসাকে কোনভাবে নষ্ট করতে পারে
?
নাহ ! তোমার আমার বর্তমান দূরত্ব পৃথিবীর যেকোনো দূরত্বের চেয়ে অনেক বেশি দূরত্বে।তবুও এই দূরত্ব যখন তোমাকে আমার কাছে থেকে আলাদা করতে পারেনি,তাহলে ভালবাসার সীমানাও অসীম এবং সেই সীমানা যেকোনো দূরত্ব পৌছাতে পারে যেকোনো দেয়াল ভেদ করে।হোক না সেটা মেঘেরই দেয়াল।
একদিন আমিও থাকবো না এই পৃথিবীতে।সেদিন পৃথিবীর বুকে আমার রেখে যাওয়া ডেড লেটার গুলোই হয়ে থাকবে আমাদের ভালবাসার চিরসাক্ষী।

আজ এ পর্যন্তই......বর্ষাকে আবার স্কুল থেকে আনতে হবে তো।আবার কাল একটি নতুন কবিতা নিয়ে স্মরন করবো তোমায়।সেই পর্যন্ত অনেক ভালো থেকো।
ও, হ্যা...আরেকটা কথা I still love you শ্রাবন।

No comments:

Post a Comment