৩৬৫ টা প্রভাত ফেরি চোখের সামনেই অনেক আশায় আশায় কেটে গেলো, ৩৬৫ টা বিকেলের গোধুলি আর সন্ধ্যার অন্ধকারও কেটে গেলো অনেক আশা নিয়ে কিন্তু, কোনো আশা পূরন হলো না।
শুধু কি এই ১ বছর'ই? নাকি আরো বেশি!
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের দেখা নেই।জানি দুজনে অনেক ব্যস্ত কিন্তু,তাই বলে একবার নয়!
সে যাই হোক আজ তো তোমার জন্মদিন।আচ্ছা কেমন আছো তুমি? এখনো কি সেই লাজুকতা কে তুমি সঙ্গে নিয়ে ঘুরো? আগের চেয়ে কি আরো শুকিয়ে গেলে নাকি আরেকটু যত্ন নিতে শিখেছো নিজের প্রতি?
আচ্ছা হঠাৎ করে জোৎস্নাহীন গভীর অন্ধকার রাতে যখন রেডিওতে একটা রোমান্টিক গানের সুর তোমার কানে ছড়িয়ে পরে তা কি তোমার হৃদয় পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়?নাকি হৃদয়টাকে সিন্ধুতে আটকে দিয়ে রেখেছো?
তোমাকে খুবেকটা সাজতে আমি কখনো দেখিনি তবে জন্মদিনের দিনগুলোতে তুমি ছিলে অন্যরকম। বড্ড সুন্দর করে সাজতে যা এখনো মনে পরলে মন চায় আবার ঐ ফুতপাতের কোনায় দাঁড়িয়ে নতুন করে প্রেমে পরি।
নাহ! এতোটা হয়তবা ধৈর্যতেও কুলাবে না আমার।সে যাই হোক আমি কিন্তু আর আগের মতো অলস নই কিংবা তোমার জন্য রাস্তার কোনে ঘন্টার পর ঘন্টা পাড় করে দেবার মতো আর সময় হাতে নিয়ে চলতে পারি না।অনেক ব্যস্ত হয়ে পরেছি তুমি কল্পনা করতে পারবে না।তবু এতো ব্যস্ততার মধ্যেও হঠাৎ যখন তোমাকে মনে পরে সময় অসময়ে হৃদয়ে মৃদু ভূমিকম্পের কিন্তু এখনো অনূভুত হয়।ভালবাসিনা বলতে বলতে হয়তো জীবদ্দশা শেষমেশ দুজনে পাড়'ই করে দেবো কিন্তু,তারপরেও মনের কোনো এক গভীর থেকে হয়তো একটা নিশ্চুপ শান্ত পারমানবিক বোমা ফেটে জোরে আওয়াজ তুলবে ভালবাসি আমি এখনো ভালবাসি আর খুব শান্ত করেই জ্বালাবে পুরাবে আমার আর তোমার অন্তর দুটিকে।
আমাদের বয়স বেড়ে যাওয়াটা যদিও আমার কাছে ভালো লাগছে না এবং মনে হয় বয়সই আমাদের বেশি আলাদা করে দিলো।খুব নিমিষেই দুজনকে পৃথিবীর দুই প্রান্তে সরিয়ে নিলো।বার বার মন চায় আবার ছুটে যাই সেই তারুন্যের পিছে পিছে যেখানে ছিলো আমাদের দেখাশুনা,চোখে চোখ পরা আর মৃদু হাসির অন্তরালে অসীম সুন্দর ভালবাসা।
শুভ জন্মদিন হে প্রীয়,আমি আজও সুন্দরী বলতে তোমাকেই বুঝি। ❤
Friday, October 26, 2018
Saturday, September 29, 2018
স্বপ্নপরি
স্বপ্নে এসেছিলে,আর নামটাও জানা হয়নি,তাই আমি নিজেই তোমার নাম দিয়ে দিলাম "স্বপ্নপরি"।
কিন্তু,তুমি কোথায় হারালে?একদিন স্বপ্নে এসেই উধাও হয়ে গেলে?
মানুষ দুঃস্বপ্ন কে ভুলে যেতে চায় আর সুস্বপ্নটা যেন সত্যি হয়,সেই আশায় থাকে।কিন্তু,তুমি আমার কেমন স্বপ্ন?স্বপ্নেই তো ভাল ছিলাম।ঘুম ভাঙার পর থেকে শুধু হারানোর যন্ত্রনা।প্রথম প্রেমটাও ভুলে উঠতে পারিনি,যার কষ্ট প্রতিনিয়ত বুকে চাবুকের আঘাত করে।
আর তুমি কিনা স্বপ্নপরি নতুন করে প্রেম জাগাতে চাও।বুঝতেও পারছিনা এবার দ্বিতীয় প্রেম এলো নাতো।আমি মেয়েদের দিকে খুব বেশি তাকাতে পারিনা,মাথা নিচু করেই চলি।আর গতকাল এখানে ওখানে,রিক্সায় কত মেয়ের দিকে তাকিয়েছি,কিন্তু খুঁজে পেলাম না তোমাকে।
তবে তুমি কি আড়ালেই থেকে যাবে?
একদিন স্বপ্নে এসে জীবন এলোমেলো করে দেবে?
Saturday, April 21, 2018
ডেড লেটার (Dead Letter)
একটা সকাল...
একটা মেঘাচ্ছন্ন সকাল আর ঝিড়ি ঝিড়ি বৃষ্টি।আমার কাছে বৃষ্টি একদম বিরক্তিকর তখন।সেই বিরক্তিকর বৃষ্টিতেই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম আর হঠাত করেই চোখ পরলো ফুটপাতে ছাতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তোমার দিকে।একবার ডানে তো একবার বামে রিক্সার খোঁজে তোমার তাকিয়ে থাকা আর চুল নিয়ে খেলতে থাকা।এসব দেখে আমি মুহূর্তের জন্য এক ধরনের স্বপ্ন নিয়ে খেলতে শুরু করলাম,যে স্বপ্ন আগে কখনো দেখিনি।
তোমার দিকে তাকিয়ে সেই স্বপ্ন দেখতে দেখতেই আমার সাইকেলটার সঙ্গে রিক্সার সংঘর্ষ,আর আমি লুটিয়ে পরলাম বৃষ্টির পানিতে ডুব দিয়ে থাকা পিচঢালা রাস্তাটাতে।তবে তাতে কিন্তু আমার একটুও লস হয়নি,বরং অনেক লাভই হয়েছিলো।রাস্তার কাঁদা পানিতে পরে যাবার পর কি হাসিটাই না দিয়েছিলে তুমি।সেখান থেকেই যেন প্রেম নামের আসক্তি আমাকে আঁকড়ে ধরলো।
তারপর রোজ তোমার জন্য কবিতা লেখা শুরু।তুমি যখন বাসস্টান্ডে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে বাসের অপেক্ষায়,আমি তখন চায়ের দোকানের ছেলেটাকে দিয়ে রোজ কবিতা পাঠাতাম তোমার কাছে।তুমি যখন কবিতা পড়তে আর মৃদু হাসতে তখন আমিও তোমাকে লুকিয়ে দেখতাম আর তোমার হাসির অপার সৌন্দর্যে পরে স্বপ্নে হারিয়ে যেতাম।
আমি জানতাম তুমি আমাকে প্রায়ই খুজতে কিন্তু, আমি জানিনা কেন যেন আমিও তোমার সামনে আসতে পারতাম না।হয়ত আমাকে না দেখেই তোমার হৃদয়ে যে ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছিলো সেটার মায়ায় বেশি পরে গিয়েছিলাম।
একদিন তুমি ঠিকই আমাকে খুঁজে বেড় করে নিলে সেই চায়ের দোকানের ছেলেটার সাহায্যেই।আমার কাছে আসার পর দুজন নীরব হয়ে দুজনের দিকে কিভাবে তাকিয়েছিলাম,যেন দুজনেই কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না এবং শুধু নির্জন তাকিয়ে দুজনের হৃদয়কে অনুভব করার চেষ্টা।হঠাত করেই তুমি দু'পা সামনে এগিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে।আর সেদিনের সেই স্পর্শের গন্ধ আজও আমার বুকে লেগে আছে।
এরপর থেকে তোমার কতো পাগলামিই না সহ্য করতে হয়েছে আমাকে।কখনো বাসের টিকিট ছাড়া বাসে উঠতে বাধ্য করেছো,কখনো রাস্তার মধ্যেই হঠাত করে গান গাওয়ানোর বায়না ধরেছো।আবার গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে তোমার বায়না মেটাতে কবিতা লিখেও শোনাতে হয়েছে।
আর আজ ! তোমার সব পাগলামি থেকে আমি মুক্ত।
একটা সময় এলো যখন বাসায় তোমার বিয়ে দেবার জন্য তড়িঘড়ি শুরু হয়ে গেলো।তুমি আমাকে বার বার বলতে --"চলো না আমরা বিয়ে করি।"
মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে হিসেবে খুবই স্বাভাবিক জীবনে এস্টাবলিশ হবার আগে সেরকম কিছু ভাবা অনেকটা পাপ।এজন্যই তোমাকে বলেছিলাম-"ভালো প্রস্তাব পেলে বিয়ে করে নাও।"
জবাবে তুমি বলেছিলে--"No one can replace you"
তারপর অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই পেয়ে গেলাম একটা ভালো চাকুরি।সাথে সাথে দুজনের পরিবারের সম্মতি এলো এবং পরিনতি বিয়ে।আমরা তখন আরো কাছাকাছি...অনেক কাছাকাছি।প্রতিদিন অফিসে যাবার সময় দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া আর রাতে বাসায় আসার পর রবীন্দ্র সঙ্গীতে দু'জন হাত ধরে প্রেমনৃত্য কি কখনো ভোলা যায়!
এখনো রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনি কিন্তু, তোমার সাথে নয় ,অন্য কারো সাথে।তোমার ৫ বছরের মেয়ে...উহু , তোমার-আমার ৫ বছরের মেয়ে বর্ষার সাথে।
একদম মেয়েটা তোমার মতো হয়েছে।সেই চোখ,সেই মুখ,সেই চুল আর সেই শরীরি গন্ধ।আমার প্রতি ভালবাসাও তোমার মতোই অনেক বেশি।তোমাকেও খুব ভালবাসে মেয়েটা। সুযোগ পেলেই তোমার ছবির সাথে কথা বলে। অবশ্য ও একা নয়,আমিও বলি।
নতুন আরেকটি বর্ষাস্নাত দিনে বর্ষার জন্মের পরপর যখন তুমি মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছিলে এবং আমার আঙ্গুল ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর আঙ্গুল ধরে চলে গেলে,তখন বাইরের বর্ষার মতোই কেঁদেছিলো মৃত মায়ের পাশে শুয়ে থাকা আমার মেয়ে বর্ষা আর ওর হতভাগা বাবা।
তারপর থেকে বিধাতার নিয়মের প্রতি প্রচন্ড রাগ হতো আমার।এখনো হয় মাঝে মাঝে।চলে যাবার আগে তুমি বলে ছিলে আরেকটা বেয়ে করে নিতে।তখনকার পরিস্থিতি আমাকে নির্বাক করে রেখেছিলো তাই সেদিন কিছু বলতে পারিনি।তবে আজ বলছি, "No one can replace you".
তোমার জন্য এখনো কবিতা লেখি। হ্যা,আগের মতোই প্রতিদিন লেখি।তারপর সেটাকে চিঠির খামে করে ডাক বাক্সে জমা দেই। কিন্তু,তোমার ঠিকানাটা'না আমার সঠিক জানা নেই।তাই প্রাপকের ঠিকানাবিহীন সবগুলো চিঠিই যে ডেড লেটার (Dead Letter) হিসেবে বিবেচিত হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।
আজ আমাদের ৬ষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকী।তাই এই চিঠিটা তোমার জন্যই লিখেছি।আরেকটু পরেই এটাকে খামে ঢুকিয়ে ডাক বক্সে জমা দিয়ে আসবো।পৃথিবীতে যোগ হবে আরেকটি ডেড লেটার।
আচ্ছা শ্রাবন,ভালবাসার কী কোনো সীমানা আছে ? দূরত্ব কি ভালবাসাকে কোনভাবে নষ্ট করতে পারে
?
নাহ ! তোমার আমার বর্তমান দূরত্ব পৃথিবীর যেকোনো দূরত্বের চেয়ে অনেক বেশি দূরত্বে।তবুও এই দূরত্ব যখন তোমাকে আমার কাছে থেকে আলাদা করতে পারেনি,তাহলে ভালবাসার সীমানাও অসীম এবং সেই সীমানা যেকোনো দূরত্ব পৌছাতে পারে যেকোনো দেয়াল ভেদ করে।হোক না সেটা মেঘেরই দেয়াল।
একদিন আমিও থাকবো না এই পৃথিবীতে।সেদিন পৃথিবীর বুকে আমার রেখে যাওয়া ডেড লেটার গুলোই হয়ে থাকবে আমাদের ভালবাসার চিরসাক্ষী।
আজ এ পর্যন্তই......বর্ষাকে আবার স্কুল থেকে আনতে হবে তো।আবার কাল একটি নতুন কবিতা নিয়ে স্মরন করবো তোমায়।সেই পর্যন্ত অনেক ভালো থেকো।
ও, হ্যা...আরেকটা কথা I still love you শ্রাবন।
একটা মেঘাচ্ছন্ন সকাল আর ঝিড়ি ঝিড়ি বৃষ্টি।আমার কাছে বৃষ্টি একদম বিরক্তিকর তখন।সেই বিরক্তিকর বৃষ্টিতেই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম আর হঠাত করেই চোখ পরলো ফুটপাতে ছাতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তোমার দিকে।একবার ডানে তো একবার বামে রিক্সার খোঁজে তোমার তাকিয়ে থাকা আর চুল নিয়ে খেলতে থাকা।এসব দেখে আমি মুহূর্তের জন্য এক ধরনের স্বপ্ন নিয়ে খেলতে শুরু করলাম,যে স্বপ্ন আগে কখনো দেখিনি।
তোমার দিকে তাকিয়ে সেই স্বপ্ন দেখতে দেখতেই আমার সাইকেলটার সঙ্গে রিক্সার সংঘর্ষ,আর আমি লুটিয়ে পরলাম বৃষ্টির পানিতে ডুব দিয়ে থাকা পিচঢালা রাস্তাটাতে।তবে তাতে কিন্তু আমার একটুও লস হয়নি,বরং অনেক লাভই হয়েছিলো।রাস্তার কাঁদা পানিতে পরে যাবার পর কি হাসিটাই না দিয়েছিলে তুমি।সেখান থেকেই যেন প্রেম নামের আসক্তি আমাকে আঁকড়ে ধরলো।
তারপর রোজ তোমার জন্য কবিতা লেখা শুরু।তুমি যখন বাসস্টান্ডে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে বাসের অপেক্ষায়,আমি তখন চায়ের দোকানের ছেলেটাকে দিয়ে রোজ কবিতা পাঠাতাম তোমার কাছে।তুমি যখন কবিতা পড়তে আর মৃদু হাসতে তখন আমিও তোমাকে লুকিয়ে দেখতাম আর তোমার হাসির অপার সৌন্দর্যে পরে স্বপ্নে হারিয়ে যেতাম।
আমি জানতাম তুমি আমাকে প্রায়ই খুজতে কিন্তু, আমি জানিনা কেন যেন আমিও তোমার সামনে আসতে পারতাম না।হয়ত আমাকে না দেখেই তোমার হৃদয়ে যে ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছিলো সেটার মায়ায় বেশি পরে গিয়েছিলাম।
একদিন তুমি ঠিকই আমাকে খুঁজে বেড় করে নিলে সেই চায়ের দোকানের ছেলেটার সাহায্যেই।আমার কাছে আসার পর দুজন নীরব হয়ে দুজনের দিকে কিভাবে তাকিয়েছিলাম,যেন দুজনেই কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না এবং শুধু নির্জন তাকিয়ে দুজনের হৃদয়কে অনুভব করার চেষ্টা।হঠাত করেই তুমি দু'পা সামনে এগিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে।আর সেদিনের সেই স্পর্শের গন্ধ আজও আমার বুকে লেগে আছে।
এরপর থেকে তোমার কতো পাগলামিই না সহ্য করতে হয়েছে আমাকে।কখনো বাসের টিকিট ছাড়া বাসে উঠতে বাধ্য করেছো,কখনো রাস্তার মধ্যেই হঠাত করে গান গাওয়ানোর বায়না ধরেছো।আবার গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে তোমার বায়না মেটাতে কবিতা লিখেও শোনাতে হয়েছে।
আর আজ ! তোমার সব পাগলামি থেকে আমি মুক্ত।
একটা সময় এলো যখন বাসায় তোমার বিয়ে দেবার জন্য তড়িঘড়ি শুরু হয়ে গেলো।তুমি আমাকে বার বার বলতে --"চলো না আমরা বিয়ে করি।"
মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে হিসেবে খুবই স্বাভাবিক জীবনে এস্টাবলিশ হবার আগে সেরকম কিছু ভাবা অনেকটা পাপ।এজন্যই তোমাকে বলেছিলাম-"ভালো প্রস্তাব পেলে বিয়ে করে নাও।"
জবাবে তুমি বলেছিলে--"No one can replace you"
তারপর অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই পেয়ে গেলাম একটা ভালো চাকুরি।সাথে সাথে দুজনের পরিবারের সম্মতি এলো এবং পরিনতি বিয়ে।আমরা তখন আরো কাছাকাছি...অনেক কাছাকাছি।প্রতিদিন অফিসে যাবার সময় দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া আর রাতে বাসায় আসার পর রবীন্দ্র সঙ্গীতে দু'জন হাত ধরে প্রেমনৃত্য কি কখনো ভোলা যায়!
এখনো রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনি কিন্তু, তোমার সাথে নয় ,অন্য কারো সাথে।তোমার ৫ বছরের মেয়ে...উহু , তোমার-আমার ৫ বছরের মেয়ে বর্ষার সাথে।
একদম মেয়েটা তোমার মতো হয়েছে।সেই চোখ,সেই মুখ,সেই চুল আর সেই শরীরি গন্ধ।আমার প্রতি ভালবাসাও তোমার মতোই অনেক বেশি।তোমাকেও খুব ভালবাসে মেয়েটা। সুযোগ পেলেই তোমার ছবির সাথে কথা বলে। অবশ্য ও একা নয়,আমিও বলি।
নতুন আরেকটি বর্ষাস্নাত দিনে বর্ষার জন্মের পরপর যখন তুমি মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছিলে এবং আমার আঙ্গুল ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর আঙ্গুল ধরে চলে গেলে,তখন বাইরের বর্ষার মতোই কেঁদেছিলো মৃত মায়ের পাশে শুয়ে থাকা আমার মেয়ে বর্ষা আর ওর হতভাগা বাবা।
তারপর থেকে বিধাতার নিয়মের প্রতি প্রচন্ড রাগ হতো আমার।এখনো হয় মাঝে মাঝে।চলে যাবার আগে তুমি বলে ছিলে আরেকটা বেয়ে করে নিতে।তখনকার পরিস্থিতি আমাকে নির্বাক করে রেখেছিলো তাই সেদিন কিছু বলতে পারিনি।তবে আজ বলছি, "No one can replace you".
তোমার জন্য এখনো কবিতা লেখি। হ্যা,আগের মতোই প্রতিদিন লেখি।তারপর সেটাকে চিঠির খামে করে ডাক বাক্সে জমা দেই। কিন্তু,তোমার ঠিকানাটা'না আমার সঠিক জানা নেই।তাই প্রাপকের ঠিকানাবিহীন সবগুলো চিঠিই যে ডেড লেটার (Dead Letter) হিসেবে বিবেচিত হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।
আজ আমাদের ৬ষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকী।তাই এই চিঠিটা তোমার জন্যই লিখেছি।আরেকটু পরেই এটাকে খামে ঢুকিয়ে ডাক বক্সে জমা দিয়ে আসবো।পৃথিবীতে যোগ হবে আরেকটি ডেড লেটার।
আচ্ছা শ্রাবন,ভালবাসার কী কোনো সীমানা আছে ? দূরত্ব কি ভালবাসাকে কোনভাবে নষ্ট করতে পারে
?
নাহ ! তোমার আমার বর্তমান দূরত্ব পৃথিবীর যেকোনো দূরত্বের চেয়ে অনেক বেশি দূরত্বে।তবুও এই দূরত্ব যখন তোমাকে আমার কাছে থেকে আলাদা করতে পারেনি,তাহলে ভালবাসার সীমানাও অসীম এবং সেই সীমানা যেকোনো দূরত্ব পৌছাতে পারে যেকোনো দেয়াল ভেদ করে।হোক না সেটা মেঘেরই দেয়াল।
একদিন আমিও থাকবো না এই পৃথিবীতে।সেদিন পৃথিবীর বুকে আমার রেখে যাওয়া ডেড লেটার গুলোই হয়ে থাকবে আমাদের ভালবাসার চিরসাক্ষী।
আজ এ পর্যন্তই......বর্ষাকে আবার স্কুল থেকে আনতে হবে তো।আবার কাল একটি নতুন কবিতা নিয়ে স্মরন করবো তোমায়।সেই পর্যন্ত অনেক ভালো থেকো।
ও, হ্যা...আরেকটা কথা I still love you শ্রাবন।
Sunday, April 1, 2018
জুবিনের কালার ব্লাইন্ড দূরবীন
দিনটা অন্য সব দিনের মতোই একটা সাধারণ দিন ছিলো আমার জন্য। যোহরের নামাজটা পরে বেড়োলাম। সেদিন অন্যদিনের মতো আর নামাজ পরে বন্ধুদের সাথে দাঁড়ালাম না। ওদের বিদায় দিয়ে মিনিট দুয়েক হাঁটার পরেই জুতা'টা বেঈমানি করলো। ছেঁড়ার ও আর সময় পেলো না!!
এই কড়া রোদের মধ্যে কতক্ষন খুঁড়িয়ে হাঁটা যায়, আশে পাশে কোনো মুচিও দেখছি না।ধুর ছাই!!! এখন এভাবেই যেতে হবে।
কতদূর হাঁটতেই দেখি পিচঢালা রাস্তার মধ্যে শুধু রঙ আর রঙ। ব্যাপারটা এমন মনে হচ্ছে যেন রাস্তাটাকে কেউ রংধনুর রঙগুলো দিয়ে সাজানোর প্রবল চেষ্টা চালিয়েছে।
আরে! কন কন একটা মৃদু হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে,সাথে দৌড়ে হাঁপিয়ে যাওয়ার নিঃশ্বাস আর এক অপরূপ উচ্ছাশ। ও আচ্ছা! এই অবস্থা তাহলে...একটা মেয়ে দারুন আনন্দ নিয়ে আরেকটা মেয়েকে রঙ ভেজানোর চেষ্টা। এক মগ রঙ হাতে নিয়ে উচ্ছশিত মেয়েটার মুখটা ঠিকঠাক দেখার জন্য একটু এদিক ওদিক করছি।কিন্তু,ওর চুল বার বার বাঁধা দিয়ে যাচ্ছে।
এইযে, আস্তে আস্তে, গায়ে লাগবে......
সামলানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ ।কাকে ভেজানোর কথা ভিজলো কে !
আমার সাদা পাঞ্জাবিটা পুরো রঙে ভিজিয়ে দিলো মেয়েটা।নিজের মুখমন্ডলে হাত দিয়ে দেখি সেটাও আর ভিজতে বাকি নেই। হাত দেবার সাথে সাথে দেখি হাতটা রঙে বর্ণীল হয়ে গেছে। আমি মুসলিম ছেলে আমার কি এসব রঙ নিয়ে খেলার অভ্যাস টভ্যাস আছে নাকি,তাই একটু রাগেই তাকালাম মেয়েটার দিকে।রাগের তাপমাত্রা একদমও কম ছিলো না অবশ্য।
তাকাতেই দেখি সামনে মেয়েটা হাসছে।বেসামাল ভাবে হাসছে...এমন মনে হচ্ছে যেনো পৃথিবীর সব হাসির সুন্দরতা ওর এইটুকু হাসির কাছেই ম্লান হয়ে যাবে।দুই গাল আর মুখে রঙ আঁকা। একবার ভাবলাম লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা নাতো...! এমনও তো হতে পারে মোনালিসা'ই হলি খেলে এসেছে।একটা মেয়ের ফর্সা ত্বকের সাথে রঙ মিলেমিশে এতোটা সুন্দর হতে পারে!
এইযে দেখো!! ডাক্তার না কয়দিন আগে মেডিকেল রিপোর্টে বললো আমি কালার ব্লাইন্ড। নিশ্চই ওর চিকিৎসায় কোনো ভূল ছিলো,কারন আমিতো ওর গালে আঁকা সব রঙ খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি।আচ্ছা ওকি রঙ মাখলেই এমন সুন্দর! রঙ ছাড়া ওকি এতোটা সুন্দর আসলে!! এসব হাবিজাবি হাজার খানেক চিন্তা করে ফেললাম এতটুকু কয়েকটা মুহূর্তে।
ওর হাসি আগের চেয়ে একটু একটু করে কমলো। তবে অল্প মৃদু হাসতে হাসতেই বললো-"আই এম স্যরি......আমি আসলে ওকে (পাশের মেয়েকে ইশারা করে) ভেজাতে গিয়ে রঙগুলো ভুল করে আপনার গায়ে ঢেলে দিছি। আই এম স্যরি।" এই বলে আবার জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। আমিও ভাবুকের মতো বাম হাতটা গালে দিয়ে ওকে দেখছি। তবে পরের দৃশ্যটা আমাকে দারুন ভাবে আকর্ষণ করেছে।মাটিতে পরে যাওয়া আমার টুপি'টা ও তুলে দেখলাম সালাম করলো। তারপর ওটার রঙ চিপরে দিয়ে আমার হাতে দিয়ে বললো একটু সাবানের গুরো দিয়ে ধুয়ে দিলেই রঙ আর থাকবে না। আমি একটা বোকা নিষ্পাপ শিশুর মতো করে ওর কথায় শুধু হ্যা বোধক সাড়া দিয়ে মাথাটা নাড়লাম। আর মনে আছে??? বলছিলাম যে বেশ ভালো তাপমাত্রার রাগ উঠেছিলো .........
সেই রাগ! ওটাও যেন রঙের সাথে মিশে একরকম ভালবাসার আচরন দেখাতে শুরু করলো।
তারপর ছেঁড়া জুতা পরে পায়ের পাতার ওপর শুকিয়ে যাওয়া রঙ দেখতে দেখতে ঘরে ফিরলাম। সেদিন সারক্ষন ঘটে যাওয়া সময়টাকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা শুরু করলাম।কিছু একটা আবিষ্কার করার চেষ্টা, একটু একটু পিছুটান আর শেষ সময়ের ফলাফল আমি ভালবাসায় হারিয়ে গিয়েছি।
পরের দিন আবার রীতিমতো সেই একই রাস্তা থেকে যাচ্ছি।কাকতালীয় ভাবে ও আজ আবার সামনে। তবে আজ কোনো উচ্ছ্বাস আনন্দে নয়। আজ ও খুবই সাধারন।ওর গালে মুখে রঙ নেই ,এর চুলগুলোও গুছানো।মনে একটাই উন্মাদনা-"ওর সাথে কথা বলবো"
আমিঃ এই যে শুনছেন ?
ওঃ জ্বী,আমাকে বলছেন?
আমিঃ হ্যা,আসলে আপনি কাল বলেছিলেন সাবানের গুরো দিয়ে ধুলেই রঙটা উঠে যাবে।অনেক চেষ্টা করলাম উঠলো না। (আরে ধুর এমন কথা বলার ইচ্ছা আমারো ছিলো নাকি!! ডাক দেয়ার পর নারভাসনেসে কি বলতে কি বলে ফেলছি)
ওঃ মানে আমি ঠিক বুঝলাম না। (ও আমাকে দেখে চিনতে পারেনি। মনে হচ্ছে এক্ষুনি এক বালতি রঙের মধ্যে মুখটা ডুবিয়ে এলে ঠিক চিনে নিবে)
আমিঃমানে কাল আপনি যেভাবে রঙ দিয়ে ভেজালেন! সাদা পাঞ্জাবির রঙটা উঠলেও টুপির রঙ অনেক ধোয়ার পরেও গেলো না। আপনি ভালো একটা ডিটারজেন্ট রিকমেন্ড করতে পারবেন?
ওঃ হা হা হা......আপনি ডিটারজেন্ট রিকমেন্ড করার জন্য আমাকে ডাক দিলেন!! অদ্ভুত ব্যাপার। যাই হোক... সারফেক্সেল ট্রাই করছেন?
আমিঃ নাহ...অন্য একটা।
ওঃ তাহলে দেখেন একটু ট্রাই করে। আশা করছি ওটাতেই যাবে।তাও যদি না যায় তাহলে একটু বেকিং পাউডার লাগাবেন তাহলেই চলে যাবে।
আমিঃ কিহ!! বেকিং পাউডার!!! 😲
ওঃওহ...স্যরি...স্যরি...ব্লিচিং পাউডার হবে ওটা। আমি আসলে দুটো নামে বার বার কনফিউশনে পরে যাই।
আমিঃ আচ্ছা আপনার নামটা জানা হলো না। আমি দুরবিন।
ওঃ কিহ দূরবিন!! কেনো চোখে বেশি দেখেন নাকি?
আমিঃ কয়দিন আগেতো ডাক্তার বললো আমি কালার ব্লাইন্ড। তো চোখ গুলা খুব সুবিধার বলে মনে হয় না।
ওঃ হা হা হা...দারুন বলছেন।কালার ব্লাইন্ড দূরবিন......হা হা হা...কেমন কেমন ব্যাপারটা 😂😂 যাই হোক আমি জুভিন।
_____________________________________________
_____________________________________________
সেদিনের কথার পর বেশ অনেকদিন দেখা হয়নি।যেন দেখা হয় সেজন্য অনেক চেষ্টা করেছি।সেই রাস্তা দিয়ে অনেক আনাগোনা করেছি কিন্তু দেখা পাইনি।ওকি আদৌ এখানে থাকে ?
অনেক গানের কলি আর গল্প তৈরি করে ফেলেছি ইতোমধ্য ওকে নিয়ে। এক একটা রাতে একটা মাত্র আশা নিয়ে রাতযাপন-"কাল ওর সাথে দেখা হলেই সব বলবো"। অনেক গুলো রাত এভাবেই যাচ্ছে কিন্তু ওর দেখাই নেই। সেই গোলির বাড়িগুলোর দিকে এদিক ওদিক করে তাকিয়ে ওর ঠিকানা আবিষ্কার করার ইচ্ছা প্রতিদিন।হঠাত, কারো ডাক এলো..."এই যে শুনছেন?"
ডানে বামে মোচড় দিয়ে দেখছি কিন্তু কই কাউকে দেখি না। "আরে উপরে তাকান এই যে এইখানে"
উপরে বারান্দার দিকে তাকিয়েই দেখছি সেই অপ্সরি আমাকে ডাকছে। অথচ তাকে কতোই না খুঁজলাম এতদিন।
ওঃ মাথার উপর টুপিতো একদম পরিষ্কার দেখছি।সারফেক্সেল দিয়েই কাজ হয়েছে নাকি বেকিং পাউডারে কাজ হয়েছে?
আমিঃ সারফেক্সেল দিয়েই হয়েছে।আর ওটা বেকিং পাউডার না,ব্লিচিং পাউডার।
ওঃ ওই হলো একটা।
ওঃ ওই হলো একটা।
আমিঃ তো কেমন আছেন? এতদিন দেখিনি যে?
ওঃ ভালো আছি। দাঁড়ান আমি নিচে আসছি ।
*এই বলে ও নিচে এলো। অবশ্য আমিও মনে মনে চাচ্ছিলাম যে ও নিচে এলে খুব ভালো হয়*
ওঃ তারপর আপনি কেমন আছে?
আমিঃ জ্বী ভালো,কিন্তু অনেকদিন আপনাকে দেখলাম নাযে?
ওঃ আমিতো আপনাকে প্রায়ই দেখতাম। কি খুঁজেন এতো এই গল্লির মধ্যে? যখনি যান খালি এদিক ওদিক তাকান।
আমিঃটুপি যেহেতু মাথায়,তাই মিথ্যা কথা বলবো না। আসলে আমি আপনাকেই খুঁজছিলাম।
ওঃ আমাকে!! সিরিয়াসলি...কিন্তু,আমাকে কেনো...?
আমিঃ আমিও জানি না।
ওঃ এটাতো তাহলে খারাপ লক্ষন।প্রেম বার্ধক্যে পরছেন?
আমিঃ জ্বী,আমারো সেই রকম মনে হয়। (আমিও আর আমতা আমতা করলাম না।আজ সুযোগ এসেছে তাই ভাবলাম বলেই দিই।তারপর যা হবার হবে)
ওঃ কিন্তু,সমস্যা তো মস্ত বড় সমস্যা...! আপনি মুসলিম আর আমি হিন্দু।
আমিঃ (আমি রীতিমত আকাশ থেকে পরলাম ও হিন্দু এটা শোনার পর।সেদিন রঙ নিয়ে খেলা যে একটা হলি উৎসব ছিলো তা আমি মাত্র বুঝতে পারলাম)
আপনি হিন্দু ধর্মের?
আপনি হিন্দু ধর্মের?
ওঃ কেনো আকাশ থেকে পরলেন মনে হয়! আমি হিন্দু আগে জানলে আরকি প্রেমে পরার রিস্ক নিতেন না তাইতো?
আমিঃ (আমি অনেক নাজেহাল পরিস্থিতিতে পরে গেছি।আচমকা শোনেই একরকম বিব্রতকর অবস্থায় পরে গেছি তার মধ্যে ওর একের পর এক কাউন্টার প্রশ্ন)
আকাশ থেকেও পরিনি আর কোনো রিস্ক টিস্কও না। তবে এমন একটা উত্তরের জন্য এরকম প্রস্তুত ছিলাম না। কারন যাই হোক যেহেতু এটা আমার জীবনের প্রথম প্রেম আর এটাকে বাঁচানোর জন্য আমাকেই লড়তে হবে।
আকাশ থেকেও পরিনি আর কোনো রিস্ক টিস্কও না। তবে এমন একটা উত্তরের জন্য এরকম প্রস্তুত ছিলাম না। কারন যাই হোক যেহেতু এটা আমার জীবনের প্রথম প্রেম আর এটাকে বাঁচানোর জন্য আমাকেই লড়তে হবে।
ওঃ একা একা লড়বেন? আপনি চাইলে আমিও মনে হয় একটু আকটু হেল্প করতে পারি। ( এ কেমন রূপ ওর।এত সুন্দর আহ্লাদ ,লজ্জা আর ভালবাসার সংমিশ্রন কি সব মেয়ের কাছেই থাকে নাকি ও একাই পারে এসব।ওকে যত দেখি তত বেশি মুগ্ধ হই।ওকে যত দেখি তত বেশি ভালবেসে ফেলি)
এরপরের গল্পগুলো অনেক স্ট্রাগলের।ওগুলো মনে করলেই কষ্ট বাড়ে শুধু। দুজনের পরিবার,আত্নীয় পরিজন সবার অমতের সাথে লড়ে আজ আমরা দুজন একসাথে।মানুষ বলে বিয়ের পর প্রেম থাকে না আর আমি বিয়ের পরের প্রেমে বিমোহিত। প্রতিদিন অফিসে যাবার সময় ও যেভাবে দরজায় এগিয়ে দিয়ে যায় আর সাঁরাদিন অফিসের ধকলের পর ঘরে ফিরে ওর মিষ্টি কথা শুনা মাত্রই চলে যায় জীবনের সকল ধরনের ক্লান্তি।আমরা জানি ঈশ্বর একজনই। ও ভগোবান ডাকে আর আমি আল্লাহ ডাকি।দুইজন দুজনের ঈশ্বরের কাছে দুজনের জন্য প্রার্থনা করি।
এই যুগেও এসে একটা ব্যাপার আমাদের মধ্যে পচন্ড ব্যাকডেটেড।প্রতিদিন সকালে নাস্তার টেবিলে এ আমাকে একটা চিঠি দেয় আর আমি ওকে দিই। আমি ওর চিঠিটা অফিসের ফাঁকে যখন পড়তে থাকি তখন ও রান্না ঘরে রান্নার ফাঁকে আমার চিঠিটা পরে। আমরা চিঠি পড়ার সময় দুজনকে খুব অনুভব করতে পারি।অনুভবের শক্তি এতোটা বেশি যে দুজন দুজনের অনেক কাছে চলে আসি।
জুবিন এখনো ভূতকে ভয় পায়। আর এই এডভান্টেজ আমি খুব ভালো মতো নেই। আমাদেরও যখন খুঁটিনাটি ঝগড়া হয় আর ও রাতের শয্যায় আমার থেকে দূরত্বে নিজেকে সরিয়ে রাখে তখন শুধু বলি আজ অফিস থেকে ফেরার সময় ভূতটাকে গলিতে দেখে আসছি। ও ভূতের ভয়ে হোক আর দূরে না থাকতে পারার কারনেই হোক ঠিকই আমার মাথার নিচের বালিশটাতে ভাগ বসিয়ে ফেলে।
আমি এখন ছুটির দিনগুলোতে হাতের মধ্যে রঙ একে সেগুলো ওর নরম গালের দেয়ালে ছুঁয়ে দেই। জুবিনের চেয়ে বর্ণীল জুবিন আরো অনেক বেশি সুন্দর।মাঝে মাঝে কালার ব্লাইন্ড দূরবিন, জুবিনের প্রচন্ড পাওয়ারের চশমা পরে বাকি পৃথিবীর রঙ ঠিকঠাক দেখার চেষ্টা করে কিন্তু,জুবিন বলে-"তোমার পৃথিবীর সব রঙ আঁকো আর আমার গালের দেয়ালেই তুমি স্পষ্ট দেখবে।কখনো চশমাটা খুলো না...তাহলে খুব ঝাপসা দেখি তোমাকে।তোমাকে ঝাপসা দেখলে খুব ভয় লাগে।তোমাকে হারানোর ভয় করতেও যে ভয় হয়।"
হ্যা,আমরা জানি কোনো একদিন আমাদের কোনো একজনকে আগে পরে হারিয়ে যেতে হবে। আর সেদিন যেন একদম একা না হয়ে যাই তাই দুজনের চিঠিগুলো জমা করে রাখি বাক্সে, রঙ মাখানো বর্ণীল ছবিগুলো তুলে রাখি এলব্যামে আর প্রতি রাতে একসাথে গাই "তুমি তাই গো,আমারো পরানো যাহা চায়"
Subscribe to:
Posts (Atom)