শেষ ক'দিন কেমন একটা শীত শীত লাগছে। এই শীতের নাম দিয়েছি আমি মিষ্টি শীত। কারন এই শীতে গরমও লাগে না, আবার খুবেকটা ঠান্ডাও লাগে না। তবে এরকম মিষ্টি শীতের প্রথম অনুভূতি নিতে শেখা এবার প্রথমবার নয়। প্রথমবার নিতে শেখা আরো ১৪টি শীতকাল পেছনে গেলে যখন আমার জীবনে প্রথমবারের মতো প্রেমের আগমন। আমার এই কয়দিনের হালকা মিষ্টি শীতের ছোঁয়া আমাকে বার বার করে সেই পেছনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের মতে যেটাকে "দেজা ভ্যু" বলে ঠিক সেরকম কিছু একটাই।
১৩ বছরের ছোট এক বালক আমি যার কাছে তখনো প্রেম-ভালবাসা, পৃথিবীর হিসেব-নিকেশ করে চলা কিংবা কি বর্তমান, কি ভবিষ্যত সেসবের জ্ঞান নেই। তবে এতটুকু জানি প্রথববার কোনো মেয়ের জন্য এতটা মায়া, আগ্রহ অথবা যেটাকে হয়ত প্রেমই বলা যেতে পারে। সে যখন এই মিষ্টি শীতকে ভালবেসে অথবা উপেক্ষা করতে রৌদ্রস্নানের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মহারানীর মতো দাঁড়িয়ে থাকতো তখন সেই বারান্দা থেকে আনুমানিক ১৫০-২০০ মিটার দূরে আমি হাতে ছোট একটি দূরবীন নিয়ে মিষ্টি কুয়াশার আফছা দেয়ালকে ভেদ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হৃদয়ে এক তরফা প্রেমের এক তরফা খুশিতে আত্নহারা হতাম আরেক বারান্দার বন্দি গ্রীলের ভেতরে। আমি ভুলতে পারিনি আজও তোমার শরীরে লেপ্টে থাকা ফুলহাতা সোয়েটারের কম্বিনেশনের চমৎকার রূপকে। সেই রূপের বর্ণনা আজ আমি করতে চাই না কারন সেই বিশ্লেষনে গেলে এ লেখার শব্দ দৈর্ঘ ছাড়িয়ে যেতে পারে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া কিংবা রাতের পর রাত কেটে এসে পরতে পারে আরেকটি নতুন বছরের নতুন মিষ্টি শীত।
সেই দিনগুলোতে ঘুমানোর সময় কম্বল গাঁয়ে মুড়িয়ে ডান হাতটাকে সব উষ্ণতার বাইরে রেখে দেয়ালের উপর আঙুল ছুঁয়ে বার বার করে লিখতে থাকতাম তোমার আমার নাম যতক্ষণ না ঘুমিয়ে পরতাম। আমার ঐ আঙুলে যদি দোয়াত কালি রাঙানো থাকতো তবে সেই দেয়ালে তুমি দেখতে পেতে কত হাজার বার কিংবা লক্ষবার তোমার আমার নামের উপরে বার বার করে লেখা তোমার আমারই নাম। ভাড়াটে বাড়িতে রেখে আসা সেই স্মৃতির স্মারক দেয়ালটিকে পারলে ভেঙে নিয়ে এসে নিজের সঙ্গে করে রাখতাম। কখনো যদি হুট করে এসে বলতে -
"আমাকে সত্যিই যদি ভালবাসো তবে প্রমান দাও দেখি!"
তাহলে ঠিক সেই দেয়ালের সামনে নিয়ে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিতাম আমার ভালবাসার স্মারকের সাথে। যদি তেমনটা হতো তবে কি তোমার কাছে এইটুকু প্রমান আমার ভালবাসার সাপেক্ষে যথেষ্ট হতো না!
এরকম অনেকগুলো মিষ্টি শীতের সন্ধ্যে আমার কেটেছে তোমার জন্য কবিতা লিখে। এতো বেশি প্রেমের কবিতা লিখতাম যে একটা সময় ভাবতাম যে কোনোদিন কবি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করলে তো মানুষ আমাকে শুধু প্রেমের কবি বলে আমার প্রতিভাকে খাটো করে দেখবে। কিন্তু, তবুও আমি শুধুই পরে থাকতাম প্রেমের কবিতায় যেখানে ছিলো কল্পনা, যার মাঝে তুমি আর আমি। একটা সময় বুঝতে পারলাম কবি হলেও আমি খুবেকটা সুবিধা অবশ্য করতে পারতাম না কারন আমার সব কবিতা ঘুরে ঘুরে সেই একই শাব্দিক কথা মাত্র। আমার কবিতার মধ্যে নেই সেইসব মেটাফিজিক্যাল ব্যাপার স্যাপার যেগুলো কবিতাকে করে দেয় অনন্য, বিচিত্র, কিংবা বেঁচে থাকার অবকাঠামো। এতো সব নেই এর মধ্যেও আমার লেখা কবিতাগুলোর এতটুকু শক্তি যথেষ্ট পরিমানেই ছিলো যা প্রকাশ করতে পারতো তোমার প্রতি আমার অসীম প্রেম, আবেগ আর ভালবাসা। আজ ১৪ টা মিষ্টি শীতকাল পেড়িয়ে অবশ্য সেইসব কবিতাগুলোর একটি খাতাও আমার কাছে নেই। এও কি বিশ্বাস করা যায় বলো! লেখা প্রায় ৫০০ কবিতার কিছুই আর আমার সঙ্গে নেই। হারিয়ে গেছে সেই একেকটি কবিতার শব্দে মোড়ানো আমার মনে জমিয়ে থাকা তোমার জন্য জমানো হাজার হাজার শব্দের কাগজগুলো। হয়তো কোথাও কেউ পড়ছে সেগুলো আর ভাবছে একটা ছোট ছেলের ছেলেমানুষি প্রেম, হয়তো কটাক্ষ করছে, হয়তো মিষ্টি হাসছে অথবা হয়তো ভাবছে ওরা কি আজ একসাথে!
আজকের এই মিষ্টি শীতেই যখন আমি অফিস ফিরতে বাসে বসে হঠাত করেই তোমাকে স্মরন করে ভাবি "যদি একবার হুট করে সামনা সামনি দেখা হয়ে যেতো!"
তুমিও কি ভাবো একবার মুখোমুখি দাঁড়াবার কথা? হয়তো ভালবাসতে নয় কিন্তু, তবু একবার যদি ভালবাসার হিসেব-নিকেশ মিটিয়ে নেয়া যেতো! অথবা যেভাবে আছি সেভাবেই থেকে যাই। কারন কয়দিন পরেই হয়তো তোমার পাশে শুয়ে থাকা অন্য কারো হাতে তোমার হাত রেখে মিষ্টি শীতকে আরেকবার উপেক্ষা করে নিবে মিষ্টি উষ্ণতার ছোঁয়া যেখানে আমি নামবো এই অচেনা শহরের সিঁড়ি ভেঙে আরেকটি নতুন দিনের তল্লাশে যেখানে আমার আরো একদিন ভাবতে হবে "সবার জীবনে প্রথম প্রেম" এসেও আসে না।